চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ভুল চিকিৎসা ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মোসা. পরী খাতুন (২২) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরের ডাক বাংলো মোড়ে আল মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। ওই গৃহবধূ গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের শিবরামপুর গ্রামের নোমান আলীর স্ত্রী।
ঘটনার পর ক্লিনিক থেকে পালিয়েছে এর মালিক ও চিকিৎসকরা। এনিয়ে গোমস্তাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত গৃহবধূর বাবা শিবরামপুর গ্রামের মো. আব্দুল আওয়াল। এনিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ওই গৃহবধূর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, রবিবার বেলা ১১টার দিকে প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে গোমস্তাপুর উপজেলার আল মদিনা ক্লিনিকে নিয়ে যায় পরিবার। সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার জানায়, মা ও বাচ্চাকে বাচাতে হলে খুব তাড়াতাড়ি সিজার করতে হবে। এরপর হাসপাতালের মালিক মো. ওবাইদুর বলেন, ক্যাশ কাউন্টারে ১৫ হাজার টাকা জমা দেন। পরিবার জানায়, অপারেশন করেন নিয়ে যাওয়ার সময় সব টাকা দেয়া হবে। দুপুর একটার দিকে ওই গৃহবধূকে সিজার করার উদ্দেশ্য অপারেশন রুমে নিয়ে যায়।
নিহত গৃহবধূর বাবা আব্দুল আওয়াল বলেন, অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার ৪৫ মিনিট পরে আমার মেয়ে এবং তার শিশুকে কেবিনে নিয়ে আসে তখন আমার মেয়ের জ্ঞান ছিল না। আমার মেয়ের সিজারের জায়গা থেকে প্রচুর পরিমানে রক্ত বের হচ্ছিল। পরে এক কর্তব্যরত নার্সের কাছে থেকে জানতে পারি, তারা আমার মেয়েকে সিজার করার সময় রক্তনালী কেটে ফেলায় কোনভাবেই রক্ত বন্ধ হচ্ছিল না।
তিনি আরও বলেন, ৪০ মিনিট পর আমার মেয়েকে অপারেশন রুম থেকে বের করে তারা তাড়াহুড়া করছিল আমার মেয়েকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানোর জন্য। এসময় তখন আমি ওবাইদুরকে জিজ্ঞেস করি আমার মেয়ের কি হয়েছে? তারা কিছু না জানিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা আমার মেয়েকে আইসিও-তে নিয়ে যায়। গত ১৯ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় মেয়ের মৃত্যু হয়।
আব্দুল আওয়াল বলেন, বাড়িতে মরদেহ নিয়ে ফিরে আসার পর ভুল চিকিৎসায় মেয়ের মৃত্যুর কথা জানালে ক্লিনিক মালিক ওবাইদুর ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সমাধান করতে চাই। টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানালে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করি, ন্যায় বিচার পাব।
নিহত গৃহবধূর স্বামী নোমান আলী জানান, আমার মেয়ে বেঁচে আছে। কিন্তু আল মদিনা ক্লিনিকের ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে আমার স্ত্রী। আমি এর নায্য বিচার চাই। আমার স্ত্রীকে মেরে উল্টো আমাদেরকেই নানরকম ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে ক্লিনিকের মালিকপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, গত ৬ মাসে এই ক্লিনিকে অন্তত ৩টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সিজারের মতো সাধারণ অপারেশনেও তারা রোগী মেরে ফেলছে। চিকিৎসক না হয়েও অপারেশন করায় ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বারবার হত্যার পরেও সংশ্লিষ্টরা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
জানা যায়, বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এবিষয়ে কথা বলতে ক্লিনিকে গেলে পাওয়া যায়নি মালিক বা চিকিৎসক কাউকেই। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে তারা। মুঠোফোনে ক্লিনিক মালিক মো. কামাল, ওবাইদুর, সাহিন আলমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কেউই ফোন রিসিভ করেননি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রহনপুর তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলে বারী বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তকাজ শুরু হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply