ইমন মিয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানা দক্ষিণ সাথালিয়া (ইটাকুড়ি) গ্রামের সামনে যমুনা নদীর মধ্যে গুড় তৈরির এক বিশেষ দৃশ্য ধরা পড়েছে। মাটির তৈরি চুলায় আগুন জ্বালিয়ে এবং খোলা রস জ্বাল দিয়ে এই গুড় প্রস্তুত করা হচ্ছে। আখ থেকে গুড় তৈরির এই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে তুলেছে। শীত মৌসুমে এমন দৃশ্য গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর শান্ত পরিবেশ ও প্রকৃতির মাঝে এই গুড় তৈরির কাজ চলছে, যা দেখে মনে হয় যেন গ্রামীণ বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরে এসেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, শীত বাড়তেই বাঙালির ঘরে রসের খিরসহ পিঠা-পুলির মহোৎসব। গ্রামের নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরীরা আখ থেকে পাতা ও আগা বাদ দিয়ে আলাদা করে রাখছেন। সেই পাতা ও আগার অংশটুকু নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে গৃহপালিত পশুর খাবার হিসেবে। এরপর রেখে দেওয়া আখ থেকে কারিগররা একটি মেশিনের মাধ্যমে রস বের করছে। তাতেই আখের রস ঢেলে জ্বাল দেওয়া হচ্ছে। সেই কড়াইয়ের দিকে সজাগ নজর কারিগরদের। পরে তা চুলা থেকে নামিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রাখার পর শক্ত হয়। পরে কারিগরদের হাতের সাহায্যে শক্ত গুড়গুলোকে একটি নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি করা হয় আখের রস থেকে সুস্বাদু গুড়।
স্থানীয় কৃষকেরা নদীর মধ্যে আখ চাষ করে আখের রস নদীর মাঝেই খোলা জায়গায় গুড় তৈরির কাজ করছেন। গুড় তৈরির এই বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রাচীন পদ্ধতির ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।
অনেকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে এই প্রক্রিয়া উপভোগ করেছেন। মোঃ আহসান হাসান হাবীব সৌরভ বলেন, এই ধরনের কাজ আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখে।
ফারজানা আক্তার জেরিন বলেন, এটি শুধু ঐতিহ্য নয়, বরং প্রাকৃতিক পরিবেশে কাজ করার এক অন্যরকম উদাহারণ।
স্থানীয় বাসিন্দা আখ চাষী আবদার হোসেন বলেন, এই গুড় বিক্রির মাধ্যমে কৃষকেরা প্রতি মৌসুমে ভালো আয় করেন। বিশেষ করে শীতকালে এই গুড়ের চাহিদা আরও বেশি থাকে। দেশীয় এবং বিদেশি বাজারে এ গুড়ের চাহিদা রয়েছে।
যমুনা নদীর মাঝে গুড় তৈরির এই দৃশ্য শুধু কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমের প্রতিফলন নয়, বরং গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যের একটি দৃষ্টান্ত উদাহরণ। এ ধরনের উদ্যোগ স্থানীয় অর্থনীতি এবং ঐতিহ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Leave a Reply