চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও শিক্ষা ব্যবস্থা নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে। আর ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বাণিজ্য, কমিটি গঠন বাণিজ্য, সনদপত্র বাণিজ্যসহ ব্যাপক দূর্ণীতি ও অনিয়মের কারণে এই অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী, সহকারি শিক্ষক, এলাকাবাসী ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। উপজেলার দূর্লভপুর ইউনিয়নের বালুটুঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, এই প্রধান শিক্ষক তাঁর স্বার্থের একটু ব্যাঘাত ঘটলে কমিটির বিরুদ্ধে মামলা কিংবা পূনরায় নতুন কমিটি গঠন করে নিজের স্বার্থ পূরণ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি বিদ্যালয়ে সপ্তাহে ৪দিন অনুপন্থিত হওয়ার সত্যেও শিক্ষক হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখা যায়। এছাড়া ভর্তি রেজিষ্ট্রার খাতাও ঠিক নাই। পাশাপাশি করোনাকালীন সময়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেতরকৃত অর্থও তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারীগণ জেলা শিক্ষা অফিসাররের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুর রহমান ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠান প্রধান হোন। তিনি গত ২৬ জুলাই গোপনে এডহক কমিটি গঠন করেয়েছেন। যা অত্র প্রতিষ্ঠানের কেউ জানেন না। এছাড়া জেলা পরিষদ থেকে প্রাপ্ত অনুদানের ১ লাখ টাকার মধ্যে প্রথম ধাপের ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি ঠিকমত বিদ্যালয়ে আসেন না, কোন শিক্ষককে মুমমেন্ট বহিতে লিখিত দায়িত্ব দেন না। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের এ্যাকুডেন্স খাতা, ক্যাশ বহি, শিক্ষার্থী ভর্তি খাতা সরিয়ে রাখেন। বলা যায়, তিনি বিদ্যালয়ের সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি বাসায় রাখেন। তিনি বিদ্যালয়ে না আসার কারণে তাঁর ক্লাসগুলো শিক্ষার্থীরা করতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাসগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে এসব দূর্ণীতি ও অনিয়মের জন্য শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, এলাকাবাসীর বিদ্যালয় চত্বরে অবস্থান এবং প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানান কথাবার্তা।
অত্র বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণি কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলে, আমাদের সামনে এসএসসি পরীক্ষা। আমরা এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবো কি না তা নিশ্চিয়তা নাই। কেননা, প্রধান শিক্ষকের কারণে আমাদের ক্লাসগুলো ঠিকমত হয় না। যদি ক্লাস না হয়, তাহলে আমরা কি শিখবো আর কি লিখবো পরীক্ষায়?
এছাড়া, সহকারি শিক্ষকগণ অভিযোগ করে বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুর রহমান সপ্তাহে ৪দিন স্কুলে আসেন না। যেদিন স্কুলে আসে সেদিন হাজিরা খাতায় সব সই করেন। এছাড়া অনুদানের টাকা, ছাত্র ভর্তি রেজিষ্ট্রারসহ বিভিন্ন কোন শিক্ষককে মুমমেন্ট বহিতে লিখিত দায়িত্ব দেন না। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের এ্যাকুডেন্স খাতা, ক্যাশ বহি সরিয়ে রাখেন। তিনি বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত কোন হিসাব দেন না। নিজের ইচ্ছেমত স্কুলে যাওয়া-আসা করেন। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির জন্য স্থানীয় অনেক গন্যমান্য ব্যক্তি থাকা সত্যেও তিনি নিজ এলাকার মানুষকে নিয়ে কমিটি অনুমোদন নিয়ে এসেছে।
এব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুর রহমান জানান, আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করছে তা সব মিথ্যে। আমি ৪দিন ছুটি নিয়েছিলাম সভাপতির কাছে। ছুটির আবেদনও আছে। ছুটির আবেদন উপজেলা শিক্ষা অফিসারকেও দেয়া আছে।
তিনি আরো বলেন, নিয়োগ বাণিজ্য করিনি। আমার স্কুলে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তি দেয়ার পর ৪১জন আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৩জন্য পরীক্ষা দেন। আর নিয়োগ প্রত্যাশী ৩জনের কাছে ৮ লাখ করে ২৪ লাখ টাকা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু নিয়োগের সব কার্যক্রম শেষে সাবেক সভাপতি সই না করায় নিয়োগ স্থগিত করা হয় এবং নিয়োগ প্রত্যাশীদের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বালুটুঙ্গি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা হওয়ার জন্য আমরা তেমন পদক্ষেপ নিতে পারি না। আমরা শুধু তাদের অনিয়মগুলো তুলে ধরে উর্দ্ধেতন কর্মকর্তাকে লিখিত দিতে পারি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বা বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটি পদক্ষেপ নিতে পারে।
Leave a Reply