এম,ডি রেজওয়ান আলী বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি-দিনাজপুর বিরামপুরে কয়েক বছরে কমে গেছে ৪০০ বিঘা আবাদি জমি জনসাধারণের অভিযোগ উঠেছে।অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ,ফসলি জমির মধ্যে নির্মাণ করছে বসতবাড়ি। পুকুর খনন ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা দৃশ্যমান রয়েছে। এবিষয়ে (১৭ মে) উপজেলাধীন একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়ন এ পর্যবেক্ষণে জানা যায়,প্রায় এলাকায় ফসলি ও আবাদি জমি কেটে পুকুর খনন অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ দৃশ্যমান রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ,সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে ইটভাটার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে গত দুই বছরে দিনাজপুর বিরামপুর উপজেলায় প্রায় ৪০০ বিঘা ফসলি জমি কমেছে গেছে। ফলে ফসল উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ।
এবিষয়ে উপজেলা পরিসংখ্যান দপ্তর সূত্রে জানা গেছে,বিরামপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২০২০ সালে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৭০০ একর। আর ২০২২ সালের শেষের জরিপে সেই জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৫৭০ একর। এ দপ্তরের হিসাবমতে, গত দুই বছরে উপজেলায় দুই ফসলি ও তিন ফসলি ১৩০ একর জমি কমে গেছে। তবে বেসরকারি হিসাবে,জমির পরিমাণ কমেছে ২০০ একরের বেশি। জমি কমার কারণের মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি,উন্নত জীবনযাত্রার সঙ্গে উন্নত আবাসনের চাহিদার বেড়ে যাওয়া এবং যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারের জন্য নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ। এ ছাড়াও রয়েছে অফিস ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ। ভবিষ্যতে ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া এখনই রোধ করা না গেলে এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলায় ফসলি জমি কমে যাওয়ার অন্য কারণের মধ্যে রয়েছে সরকারি উদ্যোগে ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে খাসজমিতে বাড়ি নির্মাণ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় চার ধাপে ১ হাজার ২৩৪টি বাড়ি নির্মাণ হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি বাড়িতে ঘর,ছোট আঙিনা ও চলাচলের রাস্তা করতে আড়াই থেকে তিন শতাংশ করে জমি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে এ প্রকল্পের জন্যই ১০০ বিঘার বেশি দুই ফসলি ও তিন ফসলি খাসজমি ব্যবহার করা হয়েছে। এবিষয়ে প্রায় ইউনিয়নে জনসাধারণ আবাদী জমির উপর বসতবাড়ি স্থাপন করেছেন। এবিষয়ে তারা প্রতিবেদককে বলেন,আগে গ্রামের ভেতরে যৌথ পরিবারে ছিলাম। পরিবারের লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখন সেখানে থাকতে সমস্যা হচ্ছে। পাড়ায় বাড়ি করার মতো জায়গাও নেই। অনেকটা বাধ্য হয়েই মাঠের আবাদি জমি কিনে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করছি বলে জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,কৃষি দপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ফসলি জমিতে বাড়িঘর ও স্থাপনা নির্মাণে সব সময়ই নিরুৎসাহিত করে থাকেন। সেই সঙ্গে একান্ত প্রয়োজনে অনাবাদি ও পতিত জমিতে বাড়িঘর নির্মাণের পরামর্শ দেন। আবাদি জমি কমে গেলেও ফসল উৎপাদন ও খাদ্যচাহিদা মেটাতে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে,সে জন্য কৃষককে একই জমিতে শস্যাবর্তন ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অধিক ফসল ফলানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য,জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আর পৌরসভা ও ইউনিয়নের মধ্যে ফসলি জমিতে বাড়িঘর বা কোনো স্থাপনা করতে হলে সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে হয়। যদি কেউ এবিষয়ে অনুমতি না নেয়,তাহলে সেটি বেআইনির আওতায় পড়ে। এবিষয়ে অনেক অভিযোগ পাওয়ার পরেও তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি উপজেলা প্রশাসন বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় জনসাধারণ।
Leave a Reply