চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সানোয়ারা বেগম নামে এক গৃহবধূর মরদেহ হাসপাতালে রেখে পালালেন স্বামী ও তার স্বজনরা। পরে শনিবার(১ জুলাই) বিকেলে হাসপাতাল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত গৃহবধূ শিবগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর ইউনিয়নের মো.সুজনের স্ত্রী। এর আগে সকালে ননদ দের সাথে টিউবওয়েলের পানি খাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া হবার পর দুপুরে কান্নার শব্দ পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় স্বামী ও শশুরবাড়ির সদস্যরা বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে গৃহবধুর মৃত্যুর বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সটকে পড়ে।আর সন্তানের দাবী তার মাকে হত্যা করেছে তার পিতা।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, প্রায় সাত বছর আগে সানোয়ারার সাথে সুজন আলীর দ্বিতীয়বার বিয়ে হয়। এর পর থেকেই পারিবারিক কলহ লেগে থাকত। শনিবার বিকেলে সুজনের পরিবার শ্বাসরোধে হত্যা করে গলায় দড়ি দিযেছে বলে হাসপাতালে মরদেহ এনে প্রচারনা চালায়। সেখানে কতব্যরত চিকিৎসক সানোয়ারা মারা যাবার বিষয়টি নিশ্চিত করলে তারা মরদেহ রেখে পালিয়ে যান।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মোহাম্মদ আলী জানান, দুর্লভপুর থেকে কয়েকজন সানোয়ারা নামে এক গৃহবধুকে নিয়ে আসলে পরীক্ষা নিরিক্ষার পর তিনি জানান, হাসপাতালে রোগী আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে।এ সময় রোগীর স্বজন ও স্বামী পালিয়ে গেলে পুলিশ কে খবর দেয়া হয়।
অন্যদিকে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার একটি সুত্র জানায়, প্রাথমিক তদন্তে সানোয়ারার গলায় আঙ্গুলের দাগ পাওয়া গেছে।ধারনা করা হচ্ছে কেউ স্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।
এদিকে মৃত সানোয়ারার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।তার ২ সন্তানের একটি দেড় বছরের কন্যা এবং অপরটি ৪ বছরের ছেলে ইয়াকুব। মেয়েটি মায়ের মারা যাবার খবর না জেনে ঘুমাচ্ছিল।আর ছেলে সন্তানটি এক প্রতিবেশীর কোলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।তার মায়ের কথা জানতে চাইলে ইয়াকুব জানায়;’ মাকে হাঁর(আমার ) আব্বা মেরে ফেলেছে।’ এরপর সে মাথা নামিয়ে চুপ করে যায়।
স্থানীয় ব্যক্তি আলিয়া জানান, সকালে ননদ নিপা ও নিশার সাথে টিউবওয়েলের পানি নেয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া হবার পর দুপুরে চিৎকার শুনে জানতে পারেন সানোয়ারা মারা গেছে।পরে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট গ্রাম পুলিশকে খবর দিলে গ্রাম পুলিশের সহায়তার নিহতের স্বামী ও তার স্বজনরা সানোয়ারাকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
নিহতের বোন রহিমা বেগম জানান, সুজনের পূর্বের স্ত্রী ও মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে বর্তমানে বিচ্ছেদ রয়েছে। আগের স্ত্রীকে ঘরে তুলতেই আমার বোন সানোয়ারাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সানোয়ারার সাড়ে ৪ বছরের ছেলে ও দেড় বছরের মেয়ে রয়েছে। ঘটনার পর থেকে নিহতের শ্বশুরবাড়ির লোকজন মরদেহ হাসপাতালে রেখেই পালিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হবে।
দূলর্ভপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শাহজাহান আলী জানান, প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে- পারিবারিক কলহের জেরে শ্বাসরোধে গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ জানান, হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর কারন জানা যাবে।মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
Leave a Reply